Video Discription |
আমরা জানি প্রাণের ছোঁয়ায় জীব সঞ্জীবনী শক্তি প্রাপ্ত হয়ে থাকে। আবার প্রাণের অভাবে জীব নির্জীব বস্তুতে পরিণত হয়।
বায়ু প্রবাহ দ্বারা যেমন সমুদ্রে ঢেউ-বুদ্বুদ-ফেনা সৃষ্টি হয়, ঠিক তেমনি এই বায়ু প্রবাহ দ্বারাই আত্মাতে ক্ষণভঙ্গুর এই সংসারের উৎপন্ন হয়েছে।
ব্যবহারিক জগতে আমরা লক্ষ করেছি, তিন ভাবের জীব। শত্রূ-মিত্র-উদাসীন। যে আমাদের দুঃখ দেয়, ক্ষতি করে, সে আমাদের শত্রূ। আবার যার সঙ্গে মিলিত হলে আমাদের সুখ হয়, সে আমাদের মিত্র। আবার এমন কিছু উদাসীন মানুষ বা জীব আছে, যে আমাদের ক্ষতি বা সুখ সাধন করে না। এরা নির্লিপ্ত। এরা সুখ দুঃখের কারন হয় না। এই শত্রূ, মিত্র, উদাসীন মানুষ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান হলে, এবং সেইমতো সতর্ক থাকলে, আমরা ভালো থাকতে পারি।
আবার কর্ম্মের জন্য এই বিশ্বের উৎপত্তি। শাস্ত্রবিহিত কর্ম্মসমূহ সম্পাদনে, আমরা বাঞ্চিত ফল পেয়ে থাকি। শাস্ত্র-নিষিদ্ধ কর্মে, বা কর্ম্ম সম্পর্কে আমরা উদাসীন হয়ে নিস্কর্মা হয়ে বসে থাকলে, আমরা প্রকৃতির নিয়মে ফল প্রাপ্ত হয়ে থাকি।
মায়া-বরন-কারিণী শক্তি দ্বারা আচ্ছাদিত কর্ম্ম-রূপিণী সেই মহামায়া তার বিক্ষেপশক্তি ( যা আসলে আমাদের কাছে কর্ম্মে প্রেরণাশক্তি) এই জগৎ সংসারকে পরিচালনা করে থাকেন। সেই মহামায়াতে যখন তমঃগুণের আধিক্য হয়, তখন তাকে আমরা স্বয়ং দূর্গা নামে অভিহিত করে থাকি। এই তমোগুণকে উপলক্ষ্য করে যে চৈতন্য উদয় হয়, তাকে বলা হয়, রুদ্রদেব। আবার এই মায়াতে সত্ত্বগুণের আধিক্য হলে, তা লক্ষী নামে অভিহিতা হন । সেই লক্ষীকে উপলক্ষ্য করে যে চৈতন্যের উদয় হয়, তাকে বলা হয় বিষ্ণু। রজোগুণের আধিক্যযুক্ত বিদ্যার নাম সরস্বতী। আবার সরস্বতী উপলক্ষিত চৈতন্যের নাম ব্রহ্ম। এই সমস্ত দেবতাই পরমাত্মাতেই দৃশ্যমান।
শরীর আসলে জড়বস্তু। আর সেই জড় বস্তুতেই প্রকাশিত হয়, সত্ত্ব, রজঃ, তম বিদ্যা। জগতের সমস্ত বস্তুই জ্ঞানের সহায়তায় প্রতিভাত হচ্ছে, কখনো জ্ঞাতা, কখনো জ্ঞেয়, কখনো জ্ঞান। সত্যি কথা বলতে কি কোনো বস্তুরই কোনো নিজস্ব সত্তা নেই। কেবলমাত্র চৈতন্যরূপে আত্মা নিত্য ভাসমান। সেই চৈতন্য সত্তা সৃষ্টি বা ব্রহ্মস্বরূপের দ্বারা প্রকাশমান বিশেষ উপাদান। বিশেষ অর্থাৎ বিশেষ নামের দ্বারা বস্তুর মধ্যে পার্থক্য করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বস্তুর মধ্যে কোনো ভেদ নেই। আমাদের যথার্থ জ্ঞানের অভাবে এই পার্থক্য লক্ষিত হচ্ছে।
আমরা পূর্ব-পূর্ব জন্মের কর্ম্মফলবশতঃ পিতার অনন্ময় কোষ থেকে সন্তানরূপে এই শরীর প্রাপ্ত হয়েছি। এই দেহ প্রথম দিকে সুন্দর-কর্মঠ হলেও, ধীরে ধীরে তা অসুন্দর কর্ম্মের অযোগ্য হয়ে যায়। এই যে অস্থি, মজ্জা, রক্ত, মাংস, স্নায়ু, শিরা-উপশিরা দ্বারা গঠিত শরীর, এটি আসলে ক্লেশময় কর্ম্মফল ভোগের মন্দির মাত্র। এই দেহ সুখ-দুঃখ ভোগের জন্যই নির্মিত হয়েছে।
শিবস্বরূপ বিন্দু আর শক্তিস্বরূপ রজঃ - এই উভয়ের মিলনে আত্মা স্বয়ং জড়রূপিণী নিজশক্তি দ্বারা বহুরূপে জন্ম গ্রহণ করে থাকেন। সেই পঞ্চভূতের নানা প্রক্রিয়ায় মিলিত হয়ে পঞ্চি-করণের ফলে যে অসংখ্য স্থুল বস্তু এই ব্রহ্মাণ্ডে উৎপন্ন হয়, সেই বস্তুসমূহে জীবগন নিজ নিজ কর্ম্ম অনুসারে অবস্থান করে থাকে। অর্থাৎ পঞ্চভূত থেকে ভোগদহ বা জীবদেহ। আর জীবের পূর্ব জীবনের কর্ম্ম অনুসারে ব্রহ্মশক্তি এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন।
আত্মা জড় পদার্থ নয়, আত্মাই ভোক্তা, আত্মাই জড়পদার্থের ভিতরে থেকে কর্ম্মফল ভোগ করে থাকেন। জড়পদার্থ হ'তে নিজ নিজ কর্ম্মে আবদ্ধ হয়ে, জীব নানা নাম, নানা রূপে নানা প্রকার হয়েথাকে। কর্ম্মফল ভোগের দ্বারা কর্ম্মফলের অবসান হয় ঠিকই, কিন্তু কর্ম্ম হীন হয়ে কেউ একমুহূর্ত থাকতে পারে না। তাই পুনঃপুনঃ চক্রবৃদ্ধি হারে কর্ম্মফলের বৃদ্ধি হতে থাকে। তাই ভোগ-বাসনায় নয়, নিরাসক্ত হয়ে কর্ম্ম করাই কর্ম্মফলের অবসান ঘটায়।
মানুষের শরীরে প্রায় সাড়েতিনলক্ষ নাড়ী আছে। এর মধ্যে চোদ্দটি নাড়ী প্রধান। সুষুম্না, ইড়া, পিঙ্গলা, গান্ধারী, হস্তিজীহ্বিকা, কুহু, সরস্বতী, পুশ, শঙ্খিনী, পয়স্বিনী, বারনী, অলম্বুষা, বিশ্বোদরী, যশস্বিনী। এর মধ্যে আবার তিনটি নাড়ী শ্রেষ্ট। ইড়া, পিঙ্গলা, সুষুম্না।
এই সুষুম্না নাড়ীর মধ্যে আছে চিত্রাণি নাড়ী। এই চিত্রাণি নাড়ীর মধ্যে আছে ব্রহ্মরন্ধ্র। এই ব্রহ্মরন্ধ্র পথই পরব্রহ্মের সঙ্গে মিলিত হবার রাস্তা। আবার এই চিত্রাণি নাড়িই এই দেহের আধার স্বরূপ। এই ব্রহ্মরন্ধ্রের পথই দিব্য পথ। এই পথে বায়ু প্রবাহিত হয়, তখন দিব্য আনন্দের অনুভব হয়ে থাকে।
আমরা মূলাধার সম্পর্কে শুনেছি। গুহ্যদ্বার থেকে দু-আঙ্গুল উঁচুতে আবার পুরুষাঙ্গ থেকে দুই আঙ্গুল নিচে অর্থাৎ পুরুষাঙ্গ ও গুহ্যদ্বার এর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করে মূলাধার। মূলাধার অর্থাৎ জীবের মূল আধার। মূলাধার থেকে যে সমস্ত নাড়ী উত্থিতা হয়েছে, সেই নাড়ীগুলো আমাদের জিহ্বা থেকে পায়ু পর্যন্ত (জিহবা, মেঢ্র, বৃষণ, পাদাঙ্গুষ্ঠ, নাসিকা, কক্ষ, নেত্র, অঙ্গুষ্ঠ, কর্ন প্রভৃতি সর্ব অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজ নিজ কার্য্য সম্পাদন ক'রে, উৎপত্তি স্থানে ফিরে আসে। এই নাড়ীগুলোই আমাদের সমস্ত দেহে বায়ুর সঞ্চালন ক'রে দেহকে সংবেদশীল করে রেখেছে। এদের ভোগবহা নাড়ী বলে।
তো এর থেকে আমরা বুঝলাম, আমাদের দেহে বায়ুর একটা বিশেষ ভূমিকা আছে। আর বায়ুর চলাচলের রাস্তা হচ্ছে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে থাকা নাড়ী সকল। এই নাড়ীর মধ্যে যে ছিদ্র বা রন্ধ্র আছে, তা অনেক সময় পিত্ত, কফ, রস দ্বারা রুদ্ধ থাকে, তাই বায়ুর চলাচল স্বাভাবিক হতে পারে না। এই বায়ু-পিত্ত-কফ ইত্যাদিকে অপসারণের জন্য বায়ুকে অত্যাধিক বেগ সম্পন্ন করা হয়, এই নাড়ীশুদ্ধি ক্রিয়ার সাহায্যে।
নাড়ীশুদ্ধি ক্রিয়া সম্পর্কে বুঝতে গেলে আমাদের বায়ুর ক্রিয়ার দিকে আমাদের দৃষ্টিপাত করতে হবে। বায়ু সম্পর্কে আমাদের একটু গভীর ভাবে বুঝতে হবে।
SASANKA SEKHAR PEACE FOUNDATION - ETERNAL PEACE SEEKER ns5p6dOfmEI |